স্বদেশ ডেস্ক:
তিন দিন আগে ২০টি গরু নিয়ে উত্তর শাজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠে আসেন কুষ্টিয়ার পশু ব্যবসায়ী আকবর আলী। কিন্তু তিন দিনে একটি গরুও বিক্রি হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল মঙ্গলবার পশুর হাট শুরু হলেও এদিন কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি তিনি। কেবল আকবর আলীই নন, রাজধানীর অন্তত পাঁচটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। নির্দিষ্ট এলাকাসহ আশপাশের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট দখল করে পশুর হাট বসলেও বিক্রি নেই।
উত্তর শাজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পশুর হাট বসেছে। যদিও তিন দিন ধরে মৈত্রী সংঘ মাঠসহ আশপাশের এলাকায় গরু রাখা হয়েছে। তবে গতকাল প্রথম দিনে ইজারাদারদের তথ্যমতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাত্র ১২টি গরু বিক্রি হয়েছে। অন্য বছর এ সময়ে কয়েকশ পশু বিক্রি হয়।
কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন পশুর হাট, মেরাদিয়া বাজার, কাওলা শিয়ালডাঙা ও পুরান ঢাকার লালবাগের রহমতগঞ্জ খলার মাঠের পশুর হাট ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। অনেকে গরুর কম দাম ও বিক্রি না হওয়ার দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। ১০টি গরু নিয়ে তিন দিন ধরে ক্রেতার অপেক্ষায়
আছেন নীলফামারীর ব্যবসায়ী তোতা মিয়া। বরাবরের মতোই তিনি এবারও এসেছেন লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের পশুর হাটে। কিন্তু ক্রেতা সংকটের পাশাপাশি কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় একটি গরুও তিনি বিক্রি করতে পারেননি। এই তিন দিনে যারাই তোতা মিয়ার গরুগুলো দেখেছেন, তাদের বেশিরভাগই দাম জানার চেষ্টা করেছেন। গরু কেনার মনোভাব নিয়ে হাটে কোনো ক্রেতা আসেননি বলে অভিমত এই বিক্রেতার।
রঞ্জু তালুকদার নামের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আরেক ব্যাপারী অনেকটা আক্ষেপ করেই বললেন, লাভের আশা তিনি এবার করছেন না। কারণ, করোনার কারণে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রম। সামান্য লাভ হলেই গরু ছেড়ে দেবেন।
মেরাদিয়া হাটে গরু নিয়ে এসেছেন ঝিনাইদহের আট গরু ব্যবসায়ী। তারা বলেন, হাটে আনা গরুগুলো তাদের ঘরে পালা। বেশি দামের আশায় তারা ট্রাকভর্তি করে গরুগুলো ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো নয়। দাম খুব কম। ২০টি গরু আনলেও গতকাল পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি।
কাওলা শিয়ালডাঙা হাটে গরু নিয়ে এসেছেন নরসিংদীর খামারি ইকবাল কবির। ৩০টি গরু নিয়ে এলেও গতকাল পর্যন্ত তার কোনো গরু বিক্রি হয়নি। এ নিয়ে হতাশ ইকবাল কবির। তিনি বলেন, এবার গরুর খামারিরা পথে বসে যাবে। বিক্রির কোনো লক্ষণ নেই। দামও কম।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন হাট ঘুরে অন্তত ১৫ গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে একই হতাশার গল্প। পশুর হাটে চিরচেনা ভিড় নেই। নেই কোলাহল। মাঝেমধ্যে কিছু মানুষ গরু দেখতে এলেও তারা কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে রহমতগঞ্জ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টিতে গরুর হাটের প্রবেশমুখে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মাঠে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও ক্রেতার দেখা নেই। আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই গরু দেখতে হাটে গেছেন। ব্যাপারীরাও ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটি করপোরেশন থেকে হাট পরিচালনা নির্দেশনা দেওয়া হলেও এটি না মানার প্রবণতাই বেশি। দুপুর আড়াইটার দিকে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাট পরিদর্শনে আসেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে হাট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের সতর্ক করে দেখা যায়।
গতকাল দুপুরে ভাটারা সাঈদনগর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে উত্তর সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় মুখে মাস্ক না থাকায় তিনজনকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করেন করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ।